শিশুর পেটব্যথার কারণ যখন অজানা
করোনার দুশ্চিন্তা মোকাবিলার সাত উপায়
করোনাভাইরাস হয়তো নতুন। কিন্তু এর প্রাদুর্ভাব নাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের সহজাত আদিম কিছু চেতনাকে। ভয়, আতঙ্ক বা দুশ্চিন্তা সামলানো মানুষের আদিম অভ্যাস। তাই যেকোনো ভয়ে পিছিয়ে না গিয়ে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করা জরুরি। মানসিক স্বাস্থ্যবিদেরা বলেন, এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তা হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু পরিস্থিতিবিশেষে দুশ্চিন্তা বেশি হলে ঘিরে ফেলে ভয়, হতাশা। নিজেকে অসহায় ভাবতে শুরু করে তখন।
করোনা থেকে বাঁচতে ঘরে থাকতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে, হাত পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। এগুলো মানতেই হবে। কিন্তু মনে যে ভাবনা কাজ করে, সেটা কত দিন? প্রতিদিন নতুন নতুন খবর, যা দুর্ভাবনা বাড়ায়। আতঙ্ক খুব সংক্রামক, তাই নিজেকে শান্ত রাখতে হবে। দুশ্চিন্তা মোকাবিলা করতে এখানে থাকছে সাতটি পরামর্শ। সিডিসি আর মানসিক স্বাস্থ্যবিদেরা এই পরামর্শ মেনে চলার কথা বলেছেন।
১. মনের দুশ্চিন্তা মেনে নিন। করোনা পরিস্থিতিতে এটি স্বাভাবিক, দুশ্চিন্তা হতেই পারে। একটু শ্বাসকষ্ট, বুক ধুকপুক করলে এত ভাবনা কেন! মনকে শান্ত করুন। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তবে দুশ্চিন্তাকে অস্বীকার করলে, তাকে পুষে রাখলে এই সমস্যা থেকে বের হওয়া কঠিন, বরং শান্ত হয়ে বসুন। শ্বাস নিতে নিতে ও ছাড়তে ছাড়তে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনুন। মনকে অন্যদিকে সরান, দেখবেন ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাচ্ছে।
২. ইলেকট্রনিকস যন্ত্রের প্লাগ খুলে রাখুন। বারবার টিভিতে খবর দেখা, ইন্টারনেট ঘাঁটা, গুগল সার্চ করার কী দরকার? কমিয়ে আনুন এই অভ্যাস। যেহেতু বিষয়গুলো আপনাকে অস্থির করে তুলছে, দিনরাত কেন তাহলে খবর দেখতে হবে, ভিডিও দেখতে হবে? যেটুকু না জানলেই নয়, দিনে এক থেকে দুবার খবর দেখুন বা জেনে নিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যেমন ফেসবুক বা অন্য কিছু নির্ধারিত সময় মেনে স্ক্রল করুন, অযথা হাত নিশপিশ নয়।
৩. গুজব বা স্বকল্পিত চিন্তা বাদ দিয়ে সত্যটা মেনে নিন। এ কথা ঠিক যে আপনি তো বালুতে মুখ গুঁজে বসে থাকতে পারবেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন সব গুজব ভাসে, মিথ্যা তথ্য আসে, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। অহেতুক ভয় বাড়ে। কারণ, অনেকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তা উপস্থাপন করেন। মনে রাখুন, এসবের অধিকাংশ হলো গুজব আর অপপ্রচার। কেবল এ দেশে কেন? পৃথিবীর প্রতিটি দেশে এমন ঘটছে। তাই বিশ্বস্ত সূত্রের সংবাদ শুনুন। এ ধরনের গুজবে বিশ্বাস আনবেন না। দেখুন উদ্বেগ কমে আসবে।
৪. প্রতিদিন নিয়ম মেনে কিছু শরীরচর্চা করুন। ঘরে বসেই করতে পারেন ব্যায়াম। সে ক্ষেত্রে চমৎকার ব্যায়াম দড়িলাফ, যথাস্থানে জগিং, বারান্দায় বাগান করা। উঁচু দালান বা ফ্ল্যাটে থাকলে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা–নামা করা, ড্রয়িং রুমে বুকডন, পানিভর্তি দুটো বোতল হাতে নিয়ে ওঠানো–নামানো, নৃত্যগীতি নয় কেন? আর ইয়োগা, প্রাণায়মও চমৎকার হবে। গেরস্থালির কাজ রান্না করলেও শরীরচর্চা হয়। এসব ব্যস্ততা আপনার ভাবনাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে অন্যত্র।
৫. যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ। ঘরবন্দী মানে কারাবাস নয়। এই সুযোগকে নিন অন্যভাবে। এটা এক নতুন অভিজ্ঞতা, অন্যভাবে জীবনযাপন। ঘরের সবার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়া, জীবনসঙ্গী, সন্তান, মা-বাবা, ভাইবোনের সঙ্গে পারিবারিক এক যুক্ত জীবন। এমন জীবন আগে ছিল না। এমন গৃহবাস রোমাঞ্চকর নয়? একসঙ্গে খাওয়া, খুনসুটি—কী নেই! আর বন্ধুদের সঙ্গে করুন ভিডিও কল, চ্যাট। লাইভ সেশন করুন জুম বা স্ট্রিম ইয়ার্ডে। নতুন প্রযুক্তি শেখাও হবে।
৬. দৈনন্দিন নিয়ম মেনে চলুন। ঘরবন্দী মানেই আমরা ‘মানি নাকো কোনো আইন’ কিন্তু নয়। উদ্দাম হলেও উচ্ছৃঙ্খল নয়। ঘুম থেকে ঠিক সময়ে উঠতে আর ঠিকমতো ঘুমাতে হবে। দিনের রুটিন চলবে আগের মতো।
মনে কেন আসবে শূন্যতা! ঘরে থেকে নেশায় জড়াবেন না। সবার সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করুন। আর পাক্কা সাত-আট ঘণ্টা ঘুম হওয়া চাই কিন্তু।
৭. দুর্বল মনোবল নয়। মনে রাখবেন, এই দুশ্চিন্তার কাল চিরস্থায়ী নয়। একদিন কেটে যাবে দুশ্চিন্তার মেঘ, দেখা যাবে মুক্তির আলো। অপেক্ষা করুন। এই অপেক্ষাতেও আছে একধরনের অনুভব। আপনি একা নন। সবার জন্য এসেছে এই দুর্ভাবনার কাল। কেটেও যাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। দেশের মানুষের জন্য এসে গেছে করোনার টিকা। অনেকে এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন। কেউ আছেন অপেক্ষায়। তবে টিকা নিলেও মেনে চলবেন স্বাস্থ্যবিধি। মুখে মাস্ক, শারীরিক দূরত্ব, সাবানপানি দিয়ে হাত ধোয়া—এসব মেনে চলুন নিজের জন্য।
যেদিন দেশের সরকার জানাবেন করোনা নেই, সেদিন হবেন মুক্ত বিহঙ্গ। তত দিন থাক নতুন স্বাভাবিক জীবন। এবার মন থেকে বলুন, ‘আমরা করব জয়।’
লেখকঃ ডা. শুভাগত চৌধুরী
সূত্রঃ প্রথম আলো