+88 01920-360-653

info@amarastha.com

শিশুর পেটব্যথার কারণ যখন অজানা

শিশুদের পেটব্যথা খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। অনেক শিশু প্রায়ই পেটব্যথার কথা বলে। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এই পেটব্যথার কারণ নির্ণয় করা যায় না। ব্যথার ধরনও নির্দিষ্ট থাকে না। প্রায়ই এই শিশুদের মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, পা কামড়ানো ও অন্যান্য নানা উপসর্গ থাকে। এরা ঠিকমতো ঘুমায় না, অস্থির, অবসাদগ্রস্ত ও খিটখিটে মেজাজের হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও থাকতে পারে। তবে ব্যথার কথা বললেও এই শিশুরা আবার ব্যথা ভুলে খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপও করে।

শিশুদের এ ধরনের পেটব্যথা নিয়ে অভিভাবকেরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। এই দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ হলো কী সমস্যায় ব্যথা হচ্ছে, তা নির্ণয় করতে না পারা। কয়েকটি কারণে শিশুদের এই পেটব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রোম অন্যতম কারণ হতে পারে। এ সমস্যায় শিশুদের বারবার, বিশেষ করে খাওয়ার পর বাথরুমে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা পাতলা পায়খানা অথবা দুটি সমস্যাই থাকতে পারে। আবার কৃমির কারণেও পেটব্যথা হতে পারে। কারও কারও ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকে বলে দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার যেমন কেক, চকলেট ডেজার্ট খেলে পেট ব্যথা করে।

পেটের অভ্যন্তরে কোনো অঙ্গে প্রদাহ হলে হঠাৎ প্রচণ্ড পেট ব্যথা করতে পারে। এসব সমস্যার মধ্যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস, অন্ত্র প্রদাহ, ফুটো বা ব্লক হয়ে যাওয়া (ইন্টেসটাইনাল পারফোরেশন বা অবস্ট্রাকশন) অন্যতম। যক্ষ্মা, হেনোক শেনলেন পারপুরা, ক্রনস ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, কিটোএসিডোসিস, হাইপোভলিউমিয়া ইত্যাদি নানা গুরুতর কারণেও পেট ব্যথা হতে পারে। কাজেই শিশুর পেটব্যথায় প্রথমেই খতিয়ে দেখতে হবে কোনো রোগ আছে কি না।

তবে শিশুর পেটব্যথার ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই কারণটা পেটের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে না। কারণটা থাকে শিশুর মনের গভীরে। আজকাল মানসিক কারণে শিশুদের পেট ব্যথা হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। অনেক শিশুর মানসিক কারণেও পেটব্যথা হতে পারে। স্নায়বিক চাপ, বিষাদ, অবসাদ, উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, পরিবার বা স্কুলে কোনো সমস্যা থেকে এ ধরনের পেটব্যথার উৎপত্তি। অনেক সময় শিশুরা নিজেকে অবহেলিত বা অপাঙ্‌ক্তেয় মনে করে। মনোযোগ আকর্ষণে তারা ব্যথার কথা বলে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। একে বলে অ্যাটেনশন সিকিং বিহেভিয়ার।

যেসব শিশু অনেক অনুভূতিপ্রবণ, তাদের ব্যথার উপলব্ধি বেশি। শিশুর মনের ব্যথা বা সমস্যা প্রকাশ পায় এই রহস্যজনক পেটব্যথার মধ্য দিয়ে। তাই এরও চিকিৎসা প্রয়োজন। অবহেলা করলে স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, অবসাদ বাড়তে পারে। তাই প্রথমে দরকার হলে পরীক্ষা–নিরীক্ষার মাধ্যমে আগে নিশ্চিত হতে হবে যে শিশুর পেটব্যথার পেছনে কোনো শারীরিক কারণ রয়েছে কি না। এ ধরনের কোনো সমস্যা না থাকলে ধরে নিতে হবে মানসিক কারণে শিশুর পেটব্যথা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে শিশুর সমস্যা ও তার সমাধানে করণীয় ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। শিশুকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। প্রয়োজন পড়লে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হবে।

লেখকঃ অধ্যাপক রনজিত রঞ্জন রায়,
চেয়ারম্যান, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্রঃ প্রথম আলো